লেনদেন বাড়ানোসহ ১২ পরিকল্পনাই বাস্তবায়নে ব্যর্থ স্টক এক্সচেঞ্জ

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজড হয়েছে আট বছর আগে। অথচ গড় লেনদেন আড়াই হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশ করাসহ ১২ পরিকল্পনার কোনোটিই বাস্তবায়ন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠান দুটি।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিশেষ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা যাতে পৃথক বিভাগ হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য দুটিকে আলাদা করা হয়েছিল। অথচ এর ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন হয়নি। এখনো মালিকরাই ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর খবরদারি করছেন।

ডিমিউচুয়ালাইজেশনের বিশেষ লক্ষ্য ছিল স্টক এক্সচেঞ্জকে লাভবান হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু মুনাফা বৃদ্ধির পরিবর্তে এখনো খুঁড়িয়ে চলছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে ডিএসইর পর্ষদ সমাপ্ত বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মাত্র ৪ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে ১১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। সে বছর ডিএসইর ইতিহাসে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন মুনাফা হয়েছিল। দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রামের অবস্থা আরও নাজুক।

মুনাফা বাড়াতে ডিএসইর পরিকল্পনা ছিল দৈনিক লেনদেন হবে ন্যূনতম আড়াই হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকারও কম।

পরিকল্পনা ছিল পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ আসবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। অথচ লক্ষ্যমাত্রার ধারের কাছেও নেই দুই স্টক এক্সচেঞ্জ।

পরিকল্পনার আরেকটি ছিল-ভালো ভালো কোম্পানিসহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়ানো হবে। পুঁজিবাজারের আকার ও গভীরতা বাড়াতে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি ও করপোরেট বন্ড, ইনডেক্স ফিউচারস, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড, সুকুক এবং ডেরিভেটিভের মতো নতুন নতুন বিনিয়োগ পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা। এসবের কিছুই হয়নি।

বিএসইসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকদের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু তারা ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারছেন না। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় সুশাসন নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটিও হয়নি।

শুধু তাই নয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার বিক্রি করেছে; কিন্তু চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এখনো শেয়ার বিক্রি করে কৌশলগত বিনিয়োগকারী আনতে পারেনি। স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচুয়ালাইজেশন শুধু কাগজে-কলমে হয়েছে।

ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। তবে এ জন্য করোনাকালকে অনেকটাই দায়ী করেন তিনি। তিনি বলেন, ডিএসই লক্ষ্যপূরণে কাজ করছে। ধীরে ধীরে পূরণ হবে।

ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, আট বছরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে বিএসইসির সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে ডিএসইর তালিকাভুক্তির জন্য পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। আমরা আইপিওর পরিকল্পনা জমা দেব।

এ বিষয়ে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সার্বিক বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জকে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড করা হয়েছিল চাপমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে। কিন্তু এখনো সেই পরিবেশ হয়নি। শুধু তাই নয়, ডিএসই ও সিএসই এখনো ব্যবসায়িকভাবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না।

আমরা ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন বাস্তবায়নে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা জানতে চেয়েছি। একই সঙ্গে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনার জানতে চেয়েছেন বলে জানান কমিশনার।